Saturday, July 5, 2025
PalongTV OnlinePalongTV Online
HomeBlogআওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে সন্ত্রাসী মামুন

আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে সন্ত্রাসী মামুন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্র কারবারি ও দুই ডজনেরও বেশি মামলার আসামি মামুনুর রশিদ মামুনকে গ্রেফতার করেছে সদর মডেল থানার পুলিশ।

রবিবার রাত ৮টার দিকে খুরুশকুলের কাউয়ার পাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করার সত্যতা নিশ্চিত করেন সদর মডেল থানার ওসি ফয়জুল আজিম নোমান।

গ্রেফতার মামুনুর রশিদ মামুন (৩২) খুরুশকুলের কাউয়ার পাড়ার মৃত নুরুল আলম বহদ্দারের পুত্র। সে খুরুশলের শীর্ষ স’ন্ত্রা’সী  এবং মামুন বাহিনীর প্রধান বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

আগেও অস্ত্রসহ র‍্যাবের হাতে ও ডিবির হাতে আটক হয়েছিল মামুন। কিন্তু জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলো।

তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরন, পাহাড় কাটা, নারী নির্যাতন, পুলিশ এসল্ট, ছিনতা’ই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৬টি মামলা রয়েছে। চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীকে আওয়ামী লীগের নেতারা ব্যবহার করত। সাবেক এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ বেশ কিছু নেতার সঙ্গে ছিল তার গভীর সখ্যতা। তাই অপরাধে পরোয়া করত না সে।

তবে স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতার সঙ্গেও সন্ত্রাসী মামুনের গভীর খাতির রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, পাঁচ স’ন্ত্রা’সী ভাই এলাকায় ত্রা’সের রাজত্ব চালিয়ে আসছে। তাদের রয়েছে বিপুল অ’স্ত্রের ভান্ডার। স’ন্ত্রা’সী চক্রের প্রধান মামুনের রয়েছে কয়েকটি কিশোর গ্যাং ও ছি’ন’তা’ইকারী চক্র। এ চক্রটি খুরুস্কুলের কাউয়ার পাড়া থেকে চৌফলদন্ডী ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিন ছি’ন’তা’ই, ডা’কা’তি করে আসছে। এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয়, নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করলে মামুন বাহিনীকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁ’দা। অন্যথায় তার নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং ও ছি’ন’তা’ই’কারী চ’ক্র দিয়ে নানাভাবে অ’ত্যা’চা’র নি’র্যা’তন চালানো হয়।

স্থানিয়রা আরও জানান, তারা ৫ স’ন্ত্রা’সী ভাইদের রয়েছে ৬টি অ’বৈ’ধ ডাম্পার গাড়ি। এসব ডাম্পার গাড়ি দিয়ে তেতৈয়া এলাকার পাহাড় নি’ধ’ন করে মাটি বিক্রি ও ছরা থেকে অ’বৈধভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে বে’প’রো’য়াভাবে। বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর বহুবার অভিযান চালিয়ে অর্ধ ডজন মামলা দিয়েও তাদের পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলন বন্ধ করতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানান, তাদের রয়েছে ২টি ফিশিং ট্রলার। এ ট্রলার দিয়ে সাগরে মাছ ধরার আড়ালে জলদ’স্যু’তা ও ইয়াবা পা’চা’রেও জড়িত এ স’ন্ত্রা’সী বাহিনী। খুরুশকুলের বঙ্গবন্ধু বাজার থেকে রাস্তারপাড়া পর্যন্ত এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁ’দা আদায় করে আসছে এ স’ন্ত্রা’সী মামুন বাহিনীর লোকজন। অনেকটা প্রকাশ্যে স’ন্ত্রা’সী মামুন ও তার বাহিনীর সদস্যরা বেপরোয়াভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালালেও  ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। এ বাহিনীর অ’ত্যা’চা’রে অনেকে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, আবার অনেকে এলাকা ছেড়ে কক্সবাজার শহরে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে।

প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১৭ মে নিজ বাড়ি থেকে আ’গ্নে’য়া’স্ত্র, গু’লি ও দা-ছু’রাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়  মামুন। এর পুর্বে ২০২১ সালের ৩১ মে রাতে ডিবি পুলিশের অভিযানে আটক হয়  মামুন ও তার ভাই কায়সার। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আ’গ্নে’য়া’স্ত্রসহ সদর মডেল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় কায়সার। আরেক ভাই পারভেজ ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অ’স্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। মামুনের আরেক ভাই রাশেদ ২০২০ সালে ১০ হাজার ইয়াবা সহ চট্টগ্রামে আ’ট’ক হয়ে কারাভোগ করে জামিনে বের হয়। একইভাবে বিভিন্ন সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠালে খুরুশকুলের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে অসে। কিন্তু জামিনে ফিরে এসে এলাকায় আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠে।

অভিযোগ উঠেছে, মামুনুর রশিদকে ছাড়িয়ে নিতে মিশনে নেমেছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও একটি প্রভাবশালী চক্র। ইতোমধ্যে পুলিশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছে। অবৈধ লেনদেনের প্রস্তাবও দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
তবে বর্তমান পুলিশের কর্মকর্তাগণ সেই আগের অবস্থানে নেই। ছাত্রজনতার আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। যে কারণে তদবিরবাজরা সুবিধা পাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

সন্ত্রাসী মামুনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে প্রভাবশালী মহলের তদবিরের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি ফয়জুল আজিম নোমান বলেন, মামুনুর রশিদ একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্র কারবারি বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। যার অনুসন্ধান চলছে। তবে কতটি মামলা রয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে বলতে হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।

এদিকে মামুনুর রশিদের মত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দাগি অপরাধীকে গ্রেফতার করায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, সদর মডেল থানার ওসি ফয়জুল আজিম নোমানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগি ও খুরুশকুলের সর্বস্তরের জনগণ।

অপরাধীদের দমনে এই ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments