নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্র কারবারি ও দুই ডজনের বেশি মামলার আসামি মামুনুর রশিদ মামুন (৩২)কে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৭ অক্টোবর) তাকে কারাগারে তোলা হয়। তার পক্ষে জামিন প্রার্থনা করার নিয়োজিত আইনজীবীরা। অন্যদিকে জামিনের বিরোধিতা ও দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এস আই মো. মামুন হোসেন।
উভয় পক্ষের আবেদন শুনানি শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ।
এবিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফয়জুল আজিম নোমান বলেন, মামুনুর রশিদ একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্র কারবারি বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তী ধার্য তারিখে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী ও আইন-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
গত রবিবার (৬ অক্টোবর) রাতে খুরুশকুলের কাউয়ার পাড়া থেকে মামুনকে গ্রেফতার করেছে সদর মডেল থানার পুলিশ। সে খুরুশকুলের কাউয়ার পাড়ার মৃত নুরুল আলম বহদ্দারের পুত্র।
তিনি সন্ত্রাসী বাহিনী লালনসহ বহু অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, পাহাড় কাটা, নারী নির্যাতন, পুলিশ এসল্ট, ছিনতা’ই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৬টি মামলা রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হত্যা মামলায় সোমবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে অস্ত্রসহ র্যাব ও ডিবির হাতে আটক হয়েছিল। কিন্তু জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে নানা অপকর্ম চালিয়ে অব্যাহত রাখে।
তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তন ও গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে মামুনের বিভিন্ন অপরাধ কর্মের ফিরিস্তি।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ সন্ত্রাসী ভাই এলাকায় ত্রা’সের রাজত্ব চালিয়ে আসছে। তাদের রয়েছে বিপুল অস্ত্রের ভান্ডার। সন্ত্রা’সী চক্রের প্রধান মামুনের রয়েছে কয়েকটি কিশোর গ্যাং ও ছি’ন’তা’ইকারী চক্র। এ চক্রটি খুরুস্কুলের কাউয়ার পাড়া থেকে চৌফলদন্ডী ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিন ছি’ন’তা’ই, ডা’কা’তি করে আসছে। এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয়, নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করলে মামুন বাহিনীকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁ’দা। অন্যথায় তার নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং ও ছি’ন’তা’ই’কারী চ’ক্র দিয়ে নানাভাবে অ’ত্যা’চা’র নি’র্যা’তন চালানো হয়। সাবেক এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মামুনের গভীর সখ্যতা। বিএনপি ঘরানার লোকদের সাথেও হাত করে চলে। যে কারণে সে সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, তারা ৫ স’ন্ত্রা’সী ভাইদের রয়েছে ৬টি অ’বৈ’ধ ডাম্পার গাড়ি। এসব ডাম্পার গাড়ি দিয়ে তেতৈয়া এলাকার পাহাড় নি’ধ’ন করে মাটি বিক্রি ও ছরা থেকে অ’বৈধভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে বে’প’রো’য়াভাবে। বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর বহুবার অভিযান চালিয়ে অর্ধ ডজন মামলা দিয়েও তাদের পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলন বন্ধ করতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, তাদের রয়েছে ২টি ফিশিং ট্রলার। এ ট্রলার দিয়ে সাগরে মাছ ধরার আড়ালে জলদ’স্যু’তা ও ইয়াবা পা’চা’রেও জড়িত এ স’ন্ত্রা’সী বাহিনী। খুরুশকুলের বঙ্গবন্ধু বাজার থেকে রাস্তারপাড়া পর্যন্ত এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁ’দা আদায় করে আসছে এ স’ন্ত্রা’সী মামুন বাহিনীর লোকজন। অনেকটা প্রকাশ্যে স’ন্ত্রা’সী মামুন ও তার বাহিনীর সদস্যরা বেপরোয়াভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালালেও ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। এ বাহিনীর অ’ত্যা’চা’রে অনেকে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, আবার অনেকে এলাকা ছেড়ে কক্সবাজার শহরে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে।
প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১৭ মে নিজ বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গু’লি ও দা-ছু’রাসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় মামুন। এর পুর্বে ২০২১ সালের ৩১ মে রাতে ডিবি পুলিশের অভিযানে আটক হয় মামুন ও তার ভাই কায়সার। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আগ্নেয়াস্ত্রসহ সদর মডেল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় কায়সার। আরেক ভাই পারভেজ ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। মামুনের আরেক ভাই রাশেদ ২০২০ সালে ১০ হাজার ইয়াবা সহ চট্টগ্রামে আটক হয়ে কারাভোগ করে জামিনে বের হয়। একইভাবে বিভিন্ন সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠালে খুরুশকুলের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে অসে। কিন্তু জামিনে ফিরে এসে স্থানীয় প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠে।
অভিযোগ উঠেছে, মামুনুর রশিদকে গ্রেফতারের পর ছাড়িয়ে নিতে মিশনে নামে রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও একটি প্রভাবশালী চক্র। পুলিশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়।
এদিকে মামুনুর রশিদের মত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দাগি অপরাধীকে গ্রেফতার করায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, সদর মডেল থানার ওসি ফয়জুল আজিম নোমানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগি ও খুরুশকুলের সর্বস্তরের জনগণ। অপরাধীদের দমনে এই ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।