Tuesday, July 1, 2025
PalongTV OnlinePalongTV Online
HomeBlogমহেশখালীতে বাদীর নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি

মহেশখালীতে বাদীর নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি

এ.এম হোবাইব সজীব:
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক আহতের ঘটনায় মামলায় থানায় এজাহারনামীয় ৪৪ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। এজাহারে বাদী হিসেবে যাঁর নাম রয়েছে তাঁর দাবি, মামলা তিনি করেননি। তবে বাদীর নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র ব্যাপক চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে মামলার বাদী মহেশখালীর ফাতেমা বেগম এবং তাঁর আহত ছেলে সাইফুল ইসলাম জানেনই না মামলার কথা। বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা কথা শুনে আঁতকে ওঠেন মামলা বাদী ফাতেমা বেগম ও আহত সাইফুল ইসলাম।
জানাগেছে, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন মুরাদপুর-শুলকবহর মাদ্রাসা সড়ক এলাকায় গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্যদের সঙ্গে মহেশখালীর কালারমারছড়া মোহাম্মদ শাহঘোনা গ্রামের বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক সাইফুল ইসলাম (২১) আহত হন। ঘটনার দেড় মাস পর ৩১ আগস্ট আহত সাইফুলের মা ফাতেমা বেগম (৪৯) বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার মামলাটি করেন। কিন্তু ফাতেমা বেগম বলেন, গত ২০ বছরে তিনি একবারও চট্টগ্রাম শহরে যাননি। মামলার বিষয়ে তিনি কোন কিছুই জানেনা। তবে যারা মামলা করেছে তারা কাজটি ভাল করেন বলে দাবি করেন।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম (৪৫), সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে (৩৭)। ঘটনা চট্টগ্রাম শহরে হলেও আসামি করা হয় কক্সবাজারের পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, রাউজান, চান্দনাইশসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজনকে। এর মধ্যে প্রবীণ শিক্ষক, লবণচাষি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও রয়েছেন। রয়েছেন বিএনপি নেতা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীও। মামলার পর বাদীর নাম দিয়ে কয়েকজন আসামির কাছ থেকে চাঁদা দাবিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মামলার এজাহারে যা আছে
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই বেলা তিনটার দিকে ফাতেমা বেগমের ছেলে সাইফুল তাঁর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদান করেন। কালা মিয়া বাজার থেকে মুরাদপুর মোড়ে এলে আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর লোহার রড, দা, কিরিচ, হাতুড়ি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আসামিদের হাতে বাঁশ, কাঠের লাঠি, ইট-পাথর, লোহার রড ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। হত্যার উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারধর, গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাইফুলসহ অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন। লোহার রড ও হাতুড়ির আঘাতে সাইফুলের মাথা ফেটে যায়। বাম পা ও হাতে প্রচণ্ড জখম হয়। একজন রিকশাচালক সাইফুলকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখানে সাইফুলের মাথায় সেলাই দেওয়া হয়। চমেক হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাইফুলকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান মা ফাতেমা বেগম। মামলায় উল্লেখ করা হয় সাইফুল দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির পর আর পড়েননি। মামলায় ফাতেমার স্বাক্ষর থাকলেও তিনি নিরক্ষর বলে নিজেই জানিয়েছেন।

চট্টগ্রামে যাওয়া হয়নি দাবি করে ফাতেমা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী রফিক উদ্দিনের আয়ে চলে তাঁদের টানাপোড়েনের সংসার। নদীতে স্বামী মাছ ধরতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হয়। দুই মেয়ের বিয়ে হলেও এক ছেলে সাইফুল কয়েক মাস ধরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চালিয়ে সংসারে কিছু অর্থের জোগান দিচ্ছেন। টাকার অভাবে সাইফুলের পড়ালেখা হয়নি, দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল।
১৭ বছর আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা বেগমের শ্বশুরবাড়ি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর স্বামী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন বাপের বাড়ি আঁধার ঘোনাতে। মাটির দেয়াল ও টিনের ছাউনি দেওয়া ছোট ঘর তুলে কয়েক বছর ধরে সেখানে থাকছে ফাতেমার পরিবার।
ফাতেমা বেগম বলেন, গত ১০ জুলাইয়ের দিকে সাইফুল রাজমিস্ত্রির কাজ করতে চট্টগ্রাম শহরে যান। ১৬ জুলাই বিকেলে রাজমিস্ত্রির কাজ শেষ করে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে মুরাদপুর এলাকায় ছাত্রলীগ-পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে পড়ে যান তিনি। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় কিছু লোক তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর বাবা ও বড় বোন হাসপাতালে গিয়ে সাইফুলকে মহেশখালীতে নিয়ে আসেন। এরপর সাইফুল আর চট্টগ্রামে যাননি। ফাতেমা নিজেও গত ২০ বছর চট্টগ্রামে যাননি বলে দাবি করেন। মায়ের পাশে বসে একই কথা বলেন সাইফুল। তিনি বলেন, পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে তাঁর মা মামলা করবেন দূরের কথা, মহেশখালী থানায় যাতায়াতের সামর্থ্য তাঁদের নেই। কে বা কারা তাঁর মায়ের নাম ব্যবহার করে মামলা করেছেন—তার তদন্ত হওয়া দরকার।
পাশাপাশি মামলায় ফাতেমার সই থাকলেও তিনি নিজেকে নিরক্ষর দাবি করেন। ফাতেমার নিকট আত্মীয় কলেজ পড়ুয়া ছাত্র সনেট মাতাব্বার জানান, সাইফুলের মা ফাতেমা বেগম নিরক্ষর। তিনি সই করতে জানেন না। একদম গ্রামের সহজ সরল একজন মাটির মানুষ তিনি। সম্পর্কে আমার চাচী হয়। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
মামলার এজাহারে ফাতেমা বেগমের সই আছে। তবে ফাতেমা নিজেই জানান, তিনি নিরক্ষর।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ মডেল থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ সোলাইমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এবং পরবর্তী অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে থানায় এসে অনেকে মামলা করেছেন। তখন তদন্ত করে মামলা রেকর্ড করার সুযোগ ছিল না হয়তো। আমি মামলাটি করার পরবর্তী নবাগত ওসি হিসাবে যোগদান করেছি। এজাহারে নিরপরাধ কাউকে যদি আসামি করা হয়, সে ক্ষেত্রে পরে বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে। আর মামলটি ফাতেমা বেগম করেছে কিনা সেটিরও তদন্ত করা হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments