
নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার সদর মডেল থানার সাবেক উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম, সেরেস্তার সাবেক মুন্সি কনস্টেবল কামরুল ও মামুন নামের এক দালালের বিরুদ্ধে দূর্নীতির মাধ্যমে জখমীর চিকিৎসা সনদ(এম.সি) জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপ- ব্যবহারের অভিযোগে কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছে আনোয়ার পাশা নামের এক ভূক্তভোগী। যার মামলা নং-৬/২৫। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে “দুদক” কক্সবাজার জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। অভিযোগকারী আনোয়ার পাশা থানায় বিভিন্ন অফিসারের অপারেটর(রাইটার) হিসাবে কর্মরত ছিল এবং অভিযুক্ত এসআই সাইফুল ইসলাম বর্তমানে ডিএমপি লালবাগ থানায় ও কনস্টেবল কামরুল ডিএমপি ডিবি’তে কর্মরত আছে বলে জানা যায়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সদরের ঝিলংজা হাজী পাড়া এলাকার জনৈক রোকেয়া বেগম ২০২৪ সালের ৯ জুন সদর মডেল থানায় স্থানীয় মাসুদ করিম সহ ০২ জনের বিরুদ্ধে মামলা নং- ৩৬/৪১৩ দায়ের করেন। অভিযুক্ত এসআই সাইফুল ইসলাম ঐ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিল। ২০২৪ সালের ৩ জুলাই রাত অনুমান ০৯.০০ টার দিকে অভিযোগকারী আনোয়ার পাশা থানায় কম্পিউটারে লেখা- লেখি করার সময় হঠাৎ এসআই সাইফুল ইসলাম খাম ভর্তি একটি এম.সি নিয়ে এসে তার ব্যাচমেট এসআই সাখাওয়াত ও জুনিয়র সেরেস্তার মুন্সি ২নং অভিযুক্ত কনস্টেবল কামরুলকে দ্রুত খবর দেন। তারা ০২ জনও তড়ি-ঘড়ি করে আসে। মুন্সি কামরুল আসার সময় থানার রিসিভ রেজিস্ট্রারও হাতে করে নিয়ে আসে। থানা কম্পাউন্ডে অফিসার ইনচার্জ সাহেব নিজ কক্ষে স্বয়ং উপস্থিত থাকা স্বত্বেও তারা উক্ত ভুঁয়া এম.সি যথা নিয়মে অফিসার ইনচার্জ সাহেবের কাছে উপস্থাপন না করে কনস্টেবল কামরুল জুনিয়র সেরেস্তার রিসিভ রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে। অফিসার ইনচার্জ সীল ব্যবহার করে এবং উক্ত অফিসার ইনচার্জের স্থলে ঠিক মার্ক দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে এসআই সাখাওয়াত নিজে স্বাক্ষর করে। টাইপিষ্ট তথা অভিযোগকারী আনোয়ার পাশা এসআই সাইফুল ইসলামের কথামতে উক্ত এম.সি বিজ্ঞ আদালতে প্রেরনের জন্য ফরওয়ার্ডিং রেডি করে এসআই সাইফুল ইসলামকে দিয়ে দেয়। পরদিন অর্থাৎ ৪ জুলাই সকালে রীতিমত অভিযোগকারী আনোয়ার পাশা তার নির্দিষ্ট টেবিলে কাজ করাকালীন সময়ে এসআই সাইফুল ইসলাম তার টেবিলে বসে প্রথমে সদর হাসপাতালের কম্পিউটার অপারেটর রানাকে ফোন করে মামলার অরিজিনাল এম.সি রেডি হয়েছে কি-না জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের ২য় তলায় থাকা শ্যামল নামের একজনের নাম্বার রানা এসআই সাইফুলকে টেক্স করেন। এসআই সাইফুল ইসলাম উক্ত শ্যামলকে কল করে বলে যে, রানার দেওয়া এম.সি টার জন্য মামুন নামের একজন অর্থাৎ অভিযুক্ত ৩নং বিবাদীকে শ্যামলের নিকট পাঠাচ্ছে। তৎমতে ৩নং অভিযুক্ত মামুন ১নং অভিযুক্ত এসআই সাইফুল ইসলামের কথামত সদর হাসপাতালে গিয়ে শ্যামলের কাছ থেকে উক্ত প্রকৃত এম.সি রিসিভ করে এবং সেখানে তার ভুল নামে স্বাক্ষর করে ও ১০ ডিজিটের মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করে। হাসপাতাল থেকে মূল এম.সি টি সফলভাবে সরানোর ভুঁয়া এম.সি টি এসআই সাইফুল ইসলাম কৌশলে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় “দৈনিক মেহেদী” নামক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর ভূয়া এম.সি’র বিষয়টি নিয়ে জানা-জানি হলে এসআই সাইফুল ইসলাম, জুনিয়র সেরেস্তার কনস্টেবল কামরুল তাদের জাল-জালিয়াতির বিষয়টি ধামা-চাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুলভ্রান্তি বুঝিয়ে এসআই সাইফুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত অপারেটর আনোয়ার পাশাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১১ জুলাই সকাল বেলা প্রতিদিনের ন্যায় অভিযোগকারী আনোয়ার পাশা থানায় ২য় তলায় গিয়ে তার টেবিলে বসে কম্পিউটারে কাজ করাকালীন পূর্বপরিকল্পনা মতে এসআই সাইফুল ইসলাম তাকে ডেকে নিয় থানার হাজতখানায় ঢুকিয়ে রাখে। পরের দিন ১২ জুলাই কক্সবাজার সদর থানার জিডি নং- ৮২৪ মূলে বিকেলে ফৌঃ কাঃ বিঃ ৫৪ ধারা মূলে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। তখন আনোয়ার পাশার পরিবার থানায় গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে বিবাদীরা তার পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে চুপ থাকতে বলেন। পরবর্তীতে বিষয়টিকে আরো জোরালোভাবে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আনোয়ার পাশা কে ০২ (দুই) দিনের পুলিশ রিমান্ডে থানায় নিয়ে আসে। রিমান্ড শেষ করে পরবর্তী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশনা থাকলেও করলেও বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে এসআই সাইফুল ইসলাম ক্ষমতার অপ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত সম্পন্ন না করে কিংবা বিজ্ঞ আাদালতকে উক্ত বিষয়ে কোনভাবে অবহিত না করে দীর্ঘ বিলম্ব করতে থাকে। পরবর্তীতে তিনি কক্সবাজার জেলা হতে ডিএমপিতে বদলীর আদেশ হলে তিনি চলে যাওয়ার প্রাক্কালে অর্থাৎ চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন সহ অভিযোগকারী আনোয়ার পাশা উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় তাকে অব্যাহতি দানের প্রার্থনা করে। এসআই সাইফুল ইসলাম উক্ত মামলার তদবিরকারক ৩নং বিবাদী মামুন ও জুনিয়র সেরেস্তার কনস্টেবল ২নং বিবাদী কামরুলের সাথে যোগ-সাজস করে ঐ মামলার বাদী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে ভুঁয়া ও জাল এম.সি সৃজন করে এবং ভূয়া ও জাল এম.সি টি খাটি হিসাবে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে। উক্ত জাল জালিয়াতির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এসআই সাইফুল ইসলাম ক্ষমতার অপ ব্যবহার করে নিরীহ ও নির্দোষ অপারেটর আনোয়ার পাশাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।