
নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে ‘হানি ট্র্যাপে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আলোচিত সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘এইট মার্ডার’ মামলার আসামি সাজ্জাদের ভাই মোহাম্মদ ওসমান গণি সেগুন (৩৪) এবং ভাগিনা মো. আলভিন (৩০)–কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭ ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ টিম।
সোমবার (২৬ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ‘কিং অব চিটাগাং’ ক্লাব থেকে সেগুন এবং অক্সিজেন মোড় এলাকা থেকে আলভিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও র্যাব-৭ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি, তবে অভিযানে অংশ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার সেগুন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার তালিতাতলী এলাকার মৃত আব্দুল গণির ছেলে এবং আলভিন চান্দগাঁও থানার পশ্চিম ফরিদাপাড়ার মো. জসিমের পুত্র।
জানা গেছে, গত ২৩ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে নুসরাত জাহান নামের এক তরুণীর সঙ্গে ঘুরতে গেলে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা আকবরকে গুলি করে। তার শরীরের হাত, পা, বুক, গলা সহ বিভিন্ন স্থানে গুলির ক্ষত হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ২৫ মে ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহত আকবর বায়েজিদ এলাকার মঞ্জু মিয়ার ছেলে।
ঘটনার পরদিন ২৬ মে আকবরের প্রথম স্ত্রী রুপালী বেগম পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর: ১২)। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মোবারক হোসেন ইমন (২২)-কে এবং আরও ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ২-৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার সেগুন মামলার ৬ নম্বর ও আলভিন ৮ নম্বর আসামি।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আকবর পেশায় ইট-বালুর ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আসামিদের সঙ্গে তার পূর্ব থেকে ব্যবসায়িক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন রাত ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে পতেঙ্গার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের পর্যটন পুলিশ বক্সের সামনে ‘ধাবা রেস্তোরাঁ’র সামনে আকবরকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়।
ঘটনাস্থলে থাকা পথচারী জান্নাতুল বাকী ও শিশু রাতুল ইসলাম মাহিন (৮)–ও গুলিবিদ্ধ হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অমিতাভ দত্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিহত আকবরের স্বজনরা দাবি করছেন, ঘটনার পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ। আকবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও পোস্ট করতেন, যার প্রতিশোধ নিতে হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৯ মার্চ বাকলিয়ার এক্সেস রোডে গুলিবর্ষণের ঘটনায় দুজন নিহত হন। ওই ঘটনায় সাজ্জাদের অনুসারীরা ঝুট ব্যবসায়ী সারোয়ার হোসেনকে লক্ষ্য করেছিলেন। সারোয়ার ও আকবর—দুজনই সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসায়িক বিরোধ এবং সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।